বুধবার ২২ অক্টোবর ২০২৫ - ১৪:৪৪
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর বক্তব্য আশ্বস্তকারী ও গৌরবময়

লেবাননের শিয়া-সুন্নি আলেমদের সংগঠন “তাজাম্মু আল-উলামায়ে আল-মুসলিমিন” এক বিবৃতিতে জানিয়েছে— ইরানের পরমাণু শিল্পে হামলার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্যের জবাবে আয়াতুল্লাহিল উজমা ইমাম সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর প্রতিক্রিয়া ছিল এমন এক দৃঢ় ও আশ্বস্তকারী বার্তা, যা ইরানের অটল অবস্থান ও আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন। ইমাম খামেনেয়ী বলেছেন, “এই বক্তব্য নিছকই ভ্রান্ত কল্পনা; তাদের এই মায়াজালে থাকতে দিন— এ স্বপ্ন কেবল স্বপ্নই থেকে যাবে।”

হাওজা নিউজ এজেন্সি: লেবাননের আলেমদের এই সংগঠনটি উল্লেখ করে, এ ধরনের দৃঢ় বক্তব্য ইরান ও সমগ্র ইসলামী উম্মাহর জন্য গর্ব ও নিশ্চিন্ততার কারণ, যা প্রমাণ করে যে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সব ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে অবিচল রয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়: যেভাবে লেবাননে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও জাতিসংঘের ১৭০১ নম্বর প্রস্তাব লঙ্ঘিত হয়েছে, ঠিক তেমনি গাজাতেও ইসরায়েলি দখলদাররা যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করছে। নাগরিক স্থাপনা ও সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে, মানবিক সাহায্যের কাফেলাগুলোর গাজায় প্রবেশে বাধা দিচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারগুলো উপেক্ষা করছে।

তাজাম্মু আল-উলামা জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ৮০ বারেরও বেশি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে, যার ফলে ৯৭ জন শহীদ ও ২৩০ জন আহত হয়েছেন।
এটি প্রমাণ করে যে যুদ্ধ এখনো থামেনি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র—যে দেশ একসময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল—তা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলি আগ্রাসনকে আড়াল করছে, যেমনটি লেবাননের ক্ষেত্রেও করছে।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়: গাজার সাহসী প্রতিরোধযোদ্ধারা এই আগ্রাসনের জবাবে বীরত্বপূর্ণ অভিযান পরিচালনা করেছে, যার ফলে “নাহাল” ব্রিগেডের এক কর্মকর্তা ও এক সৈন্য নিহত হয়েছে— ঘটনাটিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী “অত্যন্ত গুরুতর” হিসেবে বর্ণনা করেছে।

তাজাম্মু আল-উলামা আরও জানায়: সিয়োনিস্টদের নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা শুধু গাজাতেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা পশ্চিম তীরেও বিস্তৃত হয়েছে।

নাবলুস শহরে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী হঠাৎ হামলা চালিয়ে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালায়, যাতে ১১ জন ফিলিস্তিনি আহত হন।

এছাড়া, অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের একদল নাবলুসের পূর্বাঞ্চলে হামলা চালিয়ে নবী ইউসুফ (আ.)-এর মাজারের দিকে অগ্রসর হয়— এটি এমন এক পদক্ষেপ, যা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও ইসরায়েলি সরকারের মধ্যকার চুক্তির সীমা অতিক্রম করে।

দুঃখজনকভাবে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এই আগ্রাসনের মুখে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

সংগঠনটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সমালোচনা আরও যোগ করে: ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এখনো ইসরায়েলের সঙ্গে তথাকথিত “নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি”-তে আবদ্ধ এবং দখলদার বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিরোধযোদ্ধাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে সহযোগিতা করছে।

এর ফলে পশ্চিম তীরে প্রতিরোধ আন্দোলনের কার্যক্রম ক্রমেই সীমিত হয়ে যাচ্ছে।

বিবৃতিতে লেবাননের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে: ইসরায়েলি ড্রোনের লেবাননের আকাশসীমা লঙ্ঘন এবং নাবাতিয়াহ প্রদেশের মাহমুদিয়া ও জারমক এলাকায় ধারাবাহিক বিমান হামলার তীব্র নিন্দা জানায় তাজাম্মু আল-উলামা।

তারা দুঃখ প্রকাশ করে জানায়, লেবানন সরকার এখনো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেনি, যদিও নাকুরার যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ কমিটির সঙ্গে আলোচনার আর কোনো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না।

বিবৃতির শেষাংশে তাজাম্মু আল-উলামা জোর দিয়ে বলেছে: ইরানের পরমাণু শিল্পে হামলার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্যের জবাবে আয়াতুল্লাহ ইমাম খামেনেয়ীর দৃঢ়, প্রজ্ঞাপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত বক্তব্য কেবল ইরানি জনগণের জন্য নয়, বরং সমগ্র ইসলামী উম্মাহর জন্য আশাবাদ, আস্থা ও গৌরবের প্রতীক।

এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান অহংকারী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর—বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদের—বিরুদ্ধে অবিচলভাবে অগ্রসর হচ্ছে এবং চূড়ান্ত বিজয় ও সিয়োনিস্ট সত্তার সম্পূর্ণ বিলুপ্তি পর্যন্ত এই প্রতিরোধ সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha